ঢাকা
১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:৫৫
প্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০২৪
আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২৪
প্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০২৪

ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুললেও বন্যার শঙ্কা নেই, বলছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা

ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটের সবগুলো খোলা থাকলেও এই মুহূর্তে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ফারাক্কার ভারতের অংশে এই মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি চলছে। কিন্তু এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। বর্ষাকালে ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেট খোলাই থাকে। এগুলো আটকে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে জানান তারা।

অন্যদিকে, একই কথা বলছে ভারতের ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প। তারা বলছে, বাঁধ থেকে ভাটির দিকে যে পানি ছাড়া হচ্ছে, তাতে এখনই বন্যার আশঙ্কা নেই।

দেশের পূর্বাঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে যে আকস্মিক বন্যা হচ্ছে তখনও সরকারসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে ভারতের ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বন্যা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।

কিন্তু, সে সময় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছিল এ আকস্মিক বন্যার পূর্ব ধারণা ছিল। তবে এতো ব্যাপক মাত্রায় বন্যা হবে সেটি ধারণা ছিল না সরকারের।

সোমবার ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটের সবগুলোই খোলা রয়েছে এমন খবর প্রকাশিত হলে আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।

বলা হচ্ছে, ভারত ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলার ফলে এখন আবার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা বন্যার ঝুঁকিতে পড়বে।

কিন্তু, এ ধরনের শঙ্কা একেবারে নাকচ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সোমবার যে পূর্বাভাস দিচ্ছে তাতে বলা হচ্ছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত রয়েছে।

মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলার নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে গেছে।

এতে আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এ সংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।

একইসাথে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি হ্রাস পেতে পারে।

এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল ও এ সংলগ্ন উজানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি হ্রাস পেতে পারে।

উন্নতি হতে পারে নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির। একইসাথে ফেনীর নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হতে পারে। তবে, কোনো কোনো স্থানে স্থিতিশীল থাকার পূর্বাভাসও দিচ্ছে সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান স্বাক্ষরিত এ পূর্বাভাসে আরো বলা হচ্ছে, ব্রক্ষপুত্র-যমুনা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে।

উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ আছে যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

বাংলাদেশের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া দুপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এতে বাংলাদেশের আশঙ্কার কারণ নেই। তেমন কোনো বৃষ্টিপাত নেই। বৃষ্টিপাত হলেও তাতে আমাদের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।

বর্ষাকালে এ বাঁধের সবগুলো গেট খোলা থাকে উল্লেখ করে, প্রতীম বড়ুয়া বলেন, বর্ষাকালে ফারাক্কা সাধারণত খোলাই থাকে। এ মুহূর্তে উজানের যে অবস্থা অবশ্য আমাদের কাছে শতভাগ নিশ্চিত তথ্য নেই, তবে আমরা হাইড্রোলজি বা বিজ্ঞান মতে যেটা বুঝে থাকি এ মুহূর্তে ফারাক্কার গেইট সবগুলো খোলা আছে। অর্থাৎ গেইট খুলে দিয়ে বন্যা হয়ে যাওয়ার এমন কোনো সিচুয়েশন ফারাক্কাতে নেই। ফারাক্কার ১০৯টি গেইট খোলা আছে। বর্ষাকালে এগুলো সবসময় খোলাই থাকে। বর্ষাকালে এগুলো আটকে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ভারতে ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেট দুদিন ধরে খুলে দেওয়া হয়েছে বলে বাঁধ কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে সোমবার বিকলে নিশ্চিত করেছে।

ফারাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার আর ডি দেশপান্ডে জানিয়েছেন, শনিবার থেকে বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ফারাক্কা বাঁধে ১১ লাখ ৭৭ হাজার কিউসেক মতো জল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার কিউসেক জল ফিডার চ্যানেলের জন্য পাঠানো হয়, বাকি সবটাই বাঁধ থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।’

ভারতের কেন্দ্রীয় জল কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববারই ফারাক্কা বাঁধের জলস্তর বিপৎসীমা ছুঁয়েছে।

বাঁধের বিপৎসীমা ২২.২৫ মিটার, কিন্তু রোববার দুপুরেই জলস্তর ২২.৭ মিটার ছুঁয়ে ফেলে। সোমবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টাতেও জলস্তর একই রয়েছে বলে জানাচ্ছে জল কমিশন। একইসাথে কমিশন মঙ্গলবার রাত থেকে জলস্তর কমতে থাকবে বলেও পূর্বাভাস দিচ্ছে।

এদিকে, ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত।

ফারাক্কা বাঁধ সম্পর্কে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে এক বিবৃতিতে দেশটির সরকারি মুখপাত্র শ্রী রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘আমরা গণমাধ্যমে প্রতিবেদন দেখেছি যে, ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলা হলে গঙ্গা/পদ্মা নদীর ভাটিতে প্রাকৃতিক গতিপথে ১১ লক্ষ কিউসেকেরও বেশি পানি প্রবাহিত হবে। এটি একটি স্বাভাবিক মৌসুমী ক্রমবৃদ্ধি যা উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে ঘটে থাকে।’

জয়সওয়াল বলছেন, ‘এটা বুঝতে হবে যে ফারাক্কা কেবল একটি ব্যারেজ, এটি কোনো ড্যাম নয়। যখনই, পানির স্তর পুকুরের স্তরে পৌঁছায়, যে প্রবাহ আসে তা প্রবাহিত হয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র একটি কাঠামো যা মূল গঙ্গা/পদ্মা নদীর ওপর একটি গেট সিস্টেমকে সাবধানতার সাথে ব্যবহার করে ফারাক্কা ক্যানালে ৪০,০০০ কিউসেক পানি প্রবাহিত করা হয় এবং সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পানি মূল নদীতে বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রোটোকল অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত নিয়মিত ও সময়মত বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তাদেরকে জানানো হয়। এবারও সেটাই করা হয়েছে। আমরা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করার জন্য ভুয়া ভিডিও, গুজব ও ভয়ভীতির প্রদর্শন দেখেছি। এটা দৃঢ়ভাবে প্রকৃত তথ্য দিয়ে প্রতিহত করা উচিত।’

সর্বশেষ
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram