মাসুদুর রহমান খান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলা প্লাবিত। পানিবন্দী হয়ে জেলার অন্তত সাড়ে ছয় লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পানিতে ডুবে গেছে অনেক এলাকা, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। সেই সঙ্গে ডুবেছে নলকূপ, পানির ট্যাংকও। নদী, খাল, বিল, পুকুর পানিতে সব একাকার।
বানভাসী মানুষ জানিয়েছেন, এমন দুর্বিষহ অবস্থা ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ও হয়নি। এবারের বন্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। অব্যাহত ভারী বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর জোয়ারের ঢলে লক্ষ্মীপুর জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান গণমাধ্যমকে বলেন, পানিবন্দী হয়ে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। জেলার পাঁচটি উপজেলাই ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকার লোকজনকে শুকনা খাবারসহ ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। সাড়ে আট হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
জালাল উদ্দিনের বয়স এখন সত্তর ছুঁই ছুঁই। তিনি কমলনগর উপজেলার চর কাদিরিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, অধিকাংশ বাসাবাড়ির চুলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না বন্ধ আছে। এ অবস্থায় খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে পানিবন্দী পরিবারগুলোয়। বিশুদ্ধ পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা সদরের সড়কগুলোও ডুবে যাওয়ায় প্রতিটি এলাকা এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন। গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে যাচ্ছে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি। নৌকার সংকটে মানুষ নিরাপদে আশ্রয়ের খোঁজেও খুব একটা যেতে পারছেন না।
রেজাউল করিম নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার ঘরবাড়িতে এখনো বুক ও গলাসমান পানি। পরিবারের ছয়জন সদস্যকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছি। এলাকার কেউ কেউ ঘরের ভেতরে মাচা বানিয়ে থাকছেন বলেন জানান তিনি।
রামগঞ্জ উপজেলার ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবিনে হুছাইন জানান, অনেক বাড়িতেই কোমর সমান পানি। মানুষ আতঙ্কে আছেন। আপাতত জীবনরক্ষার জন্য মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন। অনেকে ত্রাণের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। সব মিলিয়ে অবর্ণনীয় এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন লক্ষ্মীপুরের মানুষ। সরকারি ও বেসরকারিভাবে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানান এই দুই জনপ্রতিনিধি।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নদীতে ভাটা এলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সব কটি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়। আবার জোয়ারের সময় গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি না হলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।