মো. নজরুল ইসলাম, অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইন। চারদিকে বিশাল জলরাশি। এই জলরাশির বুকজুড়ে গড়ে উঠেছে একের পর এক বিশাল ভবন। নাম প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। ৩০ একর জায়গা জুড়ে, চারদিকে আরসিসি দেয়াল উঠিয়ে, মাটি ভরাট করে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে দ্বিতল একটি রিসোর্ট। রিসোর্টটিতে দৃষ্টিনন্দন পার্ক ছাড়াও রয়েছে হেলিপ্যাড, বিশালাকার মৎস্য খামার। এ যেন এক স্বর্গরাজ্য।
স্থানীয়দের ধারণা, এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ২শ কোটি টাকা। রিসোর্টটি মো. হারুন অর রশিদের। সবাই যাকে চেনে ‘ডিবি হারুন’ নামে। জানা গেছে, ২০১৮ সালে নির্মিত এ রিসোর্টটির নাম প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট রাখা হয় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে খুশি করতে।
কথিত আছে, দেশীয় পর্যটকই শুধু নন, বিদেশি পর্যটকরাও রিসোর্টে আসতেন ডিবি হারুনের আহ্বানে। মনোরঞ্জনের জন্য হেলিকপ্টারে করে চেনা-অচেনা সুন্দরীদের নিয়ে আসতেন হারুন নিজেও।
এসব বিষয়ে ডিবি হারুনের চাচা গোলাম মাওলা জানান, ডিবি হারুনের বাড়ির দক্ষিণ পাশে ৩০ একর জলাভূমিতে নির্মিত রিসোর্টটির মালিক হারুন অর রশিদ হলেও এর চেয়ারম্যান ডিবি হারুনের মা জহুরা খাতুন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনের ভাই ডা. এবিএম শাহরিয়ার।
প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ফ্রন্ট অফিস এক্সিকিউটিভ তুহিন আহমেদ জানান, ২০২১ সালে জমজমাট উদ্বোধনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু রিসোর্টটিতে ১০ কটেজ ছাড়াও পার্ক, হেলিপ্যাড এবং মৎস্য চাষের জন্য বৃহদাকারের একটি বাণিজ্যিক ফিশারি রয়েছে। এ রিসোর্ট থেকে কত টাকা আয় হয় তা তার জানা না থাকলেও তুহিন বলেন, এখানে ১০টি কটেজ রয়েছে। প্রতিটি কটেজে ৪টি করে মোট ৪০টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি সুপার ডিলাক্স, যার প্রতিটির দৈনিক ভাড়া সাড়ে ৭ হাজার টাকা। আর ২০ ডিলাক্স কক্ষ রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির দৈনিক ভাড়া সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে। রিসোর্টে হারুনের নিজের জন্যও রয়েছে পৃথক কক্ষ- যেখানে বন্ধুবান্ধববেষ্টিত হয়ে নিশি যাপন করতেন হারুন। তুহিন জানান, বর্তমানে নানা ভয় ও আতঙ্কে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট বন্ধ রয়েছে।
হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া জানান, তাকে না জানিয়েই তার প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৩ একর ভূমি এবং তার ভাই শিবলুর দেড় কোটি টাকা মূল্যের সোয়া একর ভূমি ওই রিসোর্টের জন্য দখল করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ জমির মূল্য এ পর্যন্ত ডিবি হারুন পরিশোধ করেননি। তিনি জানান, এমন আরও অনেকের জমি জোরপূর্বক অথবা না জানিয়ে নিয়ে গেছেন ডিবি হারুন। পুলিশের বড় কর্মকর্তা হওয়ায় তখন কেউ টু শব্দটি পর্যন্ত করতে পর্যন্ত সাহস পাননি।