জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারে অব্যাহত ভারি বর্ষণের কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩ লাখের বেশি মানুষ। ইতোমধ্যে বৃষ্টির পানিতে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ২৫০ গ্রাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত এলাকা উখিয়া উপজেলা। অতি বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের আশংকাও।
বুধবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে কক্সবাজার পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারি আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, বুধবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত গেল ২৪ ঘণ্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান ২৩৪ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। কক্সবাজারে আগামি আরও ৩ দিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশংকার কথা জানিয়েছেন তিনি। আর সমুদ্রবন্দরে ৩ নং সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের শিক্ষক মোস্তফা সরওয়ার জানিয়েছেন, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাক পাড়া, নাজিরারটেক সহ ৮ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব এলাকায় ১০ হাজারের বেশি পরিবারের বসবাস।
বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার শহরের গোলদিঘীরপাড়, বৌদ্ধ মন্দির এলাকা, কলাতলী, সদর ইউনিয়নের ঝিলংজা ইউনিয়নের ২০ টির বেশি গ্রাম।
কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন সড়ক উপ-সড়কে প্লাবিত হয়ে একপর্যায়ে অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতেও ঢুকে পড়ে। এতে অনেক বাড়ি ঘরের আসবাবপত্র, দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ. কে. এম তারিকুল আলম বলেন, জলাবদ্ধতা এই শহরে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই সমস্যা নির্মূলে পৌর মেয়রের নেতৃত্বে পৌর পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে নাল নর্দমা দখল করে নির্মিত স্থাপনা ধ্বংস করে পুণরায় উদ্ধারের কাজ শুরু করেছি।
জেলায় সবচেয়ে বেশি বন্যা কবলিত এলাকা উখিয়া উপজেলা। যেখানে ২ শতাধিক গ্রামের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা।
হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নে ২০ গ্রামের ৩ হাজার পরিবার পানিবন্ধি রয়েছে। যেখানে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছে। ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় আছে।
জালিয়াপালং ইউনিয়নের এসএম ছৈয়দ আলম জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো এলাকার মানুষ এখন পানিবন্দি। যেখানে ৫০ টি গ্রামের ৫০ হাজারের অধিক মানুষ রয়েছে।
রাজাপালং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ওই ইউনিয়নের ৫০ গ্রামের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকাও পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
ভূমিধসের আশংকা দেখা দিচ্ছে। একইভাবে পালংখালী ইউনিয়নের ৪০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যেখানে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি রয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন জানান, কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশংকাও রয়েছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সর্তক করা হচ্ছে।