জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার প্রতিনিধি: টানা বৃষ্টিতে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙ্গে পড়ছে কক্সবাজার সৈকতের শতশত ঝাউগাছ। গেল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি, লঘুচাপ ও ভরা পূর্ণিমার জোয়ার অব্যাহত থাকায় বেড়েই চলেছে ভাঙনের তীব্রতা।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে লাবনি বীচ পয়েন্ট থেকে নাজিরার টেক সমুদ্র মোহনা পযন্ত ঘুরে দেখা যায় সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে জিও ব্যাগ ডিঙ্গিয়ে সমুদ্র বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা শতশত ঝাউগাছ ভেঙ্গে পড়ছে। হুমকিতে পড়েছে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টিপাত, পূর্ণিমার জোয়ার ও লঘুচাপের কারণে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঢেউয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কূলে আঁচড়ে পড়া ঢেউ সজোরে আঘাত করছে জিও ব্যাগে। এসব জিও ব্যাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সমুদ্রের পানি ঝাউগাছে গিয়ে পড়ছে। ফলে মাটি নরম হয়ে একে একে নুইয়ে পড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে ঝাউগাছগুলো। যার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও বালিয়াড়িতে লাগোয়া ছোট-বড় স্থাপনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না গেলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সমুদ্রে দায়িত্বরত লাইফগার্ড কর্মী আব্দুল শুক্কর বলেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সমুদ্রে পর্যটক নেই বললে চলে। পরিস্থিতি যাই হোক আমাদের দায়িত্ব পালনে সমুদ্রে থাকতে হয়। টানা বৃষ্টি তার উপর সাগরে সতর্ক সংকেত, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারনে সাগরের পাড় ভেঙ্গে ঝাউ গাছগুলো পড়ে যাচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের সীমানা ধরে হাটতে হাটতে দেখেছি অনেক ঝাউগাছ পড়ে আছে।
সমুদ্রে জাল নিয়ে মাছ ধরতে আসা জুয়েল বলেন, গত দুই তিন দিন ধরে বেশি ঝাউগাছ পড়ে গেছে। বড় বড় সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সোজা ঝাউগাছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এমন হয়। তবে এবারের মতো এতো বেশি ক্ষতি আগে দেখা যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সমুদ্রের ভাঙ্গন টেকাতে সমুদ্রের বালিয়াড়িতে জিও ব্যাগ দিয়েও রক্ষা করতে পাচ্ছে না ঝাউগাছগুলো।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সরওয়ার আলম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। যার কারণে জোয়ারের পানির ধাক্কায় কক্সবাজারের নাজিরারটেক, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, শৈবাল পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্টসহ বেশ কয়েক জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি সময়ে প্রায় ২শ বড় এবং ১৪শ ছোট ঝাউ চারা উপড়ে গেছে। ভাঙন রোধে গাইড ওয়াল ও টেকসই বনায়ন করলে ভাঙন রোধ হতে পারে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিথুন ওয়াদ্দাদার জানান, সমুদ্র তীর ভাঙন প্রতিরোধে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শিগগিরই অত্যাধুনিক ফ্লাড ওয়াল ও ব্লক নির্মাণ করা হবে। এ কাজ সম্পন্ন হলে রক্ষা পাবে ঝাউ বাগান। এছাড়াও বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য এটা একটি ভালো খবর হতে পারে।
এদিকে, জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, টেকনাফ উপজেলার অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।