শাহজাহান হেলাল, মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের মধুখালীতে ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে মন্দীরে আগুন গুজব রটিয়ে দুই নির্মাণ শ্রমিক আপন দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আসাদুজ্জামান তপন ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসকে অপসরণ করা হয়েছে। রোববার (৭ জুলাই) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
ঘটনার ৮১ দিন পার হলেও এখনও অভিযুক্ত ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আসাদুজ্জামান তপন কিংবা ইউপি সদস্য অজিত বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করতে পারে নাই পুলিশ।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.মিরাজ হোসেন জানান, হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও মন্দিরে আগুন দেয়ার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে আটজনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশের ওপর হামলা মামলায় চারজন ও হত্যা মামলায় সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই জনপ্রতিনিধি মন্দিরে আগুন লাগানোর জন্য শ্রমিকদের দায়ী করে স্বীকারোক্তি আদায় করতে কিল-ঘুষি ও চড়থাপ্পড় মারেন। এর আগে ডুমাইন ইউনিয়নের নিশ্চন্তপুর গ্রামের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর হামলায় মামলা ও টিসিবি কার্ডের মাল আত্মসাতের ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্তহন ডুমাইন ইউপির চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আসাদুজ্জামান তপন। তবে দুবারই তিনি উচ্চ আদালতের মাধ্যমে পদ ফিরে পান। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছিল।
রোববার (৭ জুলাই) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আসাদুজ্জামান তপনের বিরুদ্ধে ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে ১৮ এপ্রিল ২০২৪খ্রিঃ দুই নির্মাণ শ্রমিক হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯-এর ৩৪(৪)(খ)(ঘ) ধারা অনুযায়ী ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশের কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয় ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আসাদুজ্জামান তপন ও ইউপি সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে উল্লিখিত অভিযোগে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। এ কারণে স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯-এর ৩৪(৪) (খ) (ঘ) ধারা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য স্বীয় পদ হতে অপসারণ করা হলো। এ আদেশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ক্রমে জনস্বার্থে জারি করা হলো এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন,২০০৯-এর ৩৫ (১)(২) ধারা অনুযায়ী পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মধুখালীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শাহ মোঃ আসাদুজ্জামান তপন ডুমাইন ইউনিয়নের ডুমাইন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১২ সালে প্রথমবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২২ সালে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খোরশেদ আলম মাসুমকে পরাজিত করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। শ্রমিকদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনটি ভিডিও ক্লিপ ২৩ এপ্রিল ২০২৪খ্রিঃ এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান বের করতে পারে নাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
উল্লেখ্য, ১৮ এপ্রিল ২০২৪খ্রিঃ সন্ধ্যায় পঞ্চপল্লী মন্দিরের প্রতিমার শাড়িতে আগুন দেওয়া এবং সন্দেহের বশে পাশের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লোক নির্মাণে নিয়োজিত চার নির্মাণ শ্রমিককে একটি কক্ষে আটকে পিটুনি দেওয়া হয়। এতে কর্মরত নির্মাণ শ্রমিক আশরাফুল ও আসাদুল নামের আপন দুই সহোদর মারা যান। নির্মাণ শ্রমিকদের পিটুনিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আসাদুজ্জামান তপন, সদস্য অজিত বিশ্বাস ও অমৃত কুমার বসু নামের এক গ্রাম পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা পায় তদন্ত কমিটি। এই ঘটনায় মধুখালী থানায় তিনটি মামলা হয়।