ঢাকা
৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ভোর ৫:৫৭
প্রকাশিত : এপ্রিল ২০, ২০২৫
আপডেট: এপ্রিল ২০, ২০২৫
প্রকাশিত : এপ্রিল ২০, ২০২৫

আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, বাড়ছে গ্রেপ্তারও

আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল বের করার ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশত ঝটিকা মিছিল হয়েছে। সারা দেশে জেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করছে। এসব মিছিলে ফটোসেশন করা হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় ছদ্মনামের আইডিতে সেগুলো পোস্ট করছেন। মিছিলের ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বাইরে পলাতক থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে।

মিছিলের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্পরতাও বেড়ে গেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ১ মার্চ পর্যন্ত ২২ দিনে সারা দেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সাড়ে ১২ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার অভিযান একটু থেমে ছিল। গত রবিবার রাজধানীর বাড্ডায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি ঝটিকা মিছিল বের করে। মিছিলটি উত্তর বাড্ডা থেকে রামপুরা বাজারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে দুই শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে এই মিছিল করার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এর পরই আওয়ামী লীগের মিছিলের প্রতি পুলিশকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ নিয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আওয়ামী লীগের মিছিল কন্ট্রোল করতে না পারলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবিষ্যতে যাতে মিছিল না হতে পারে সে ব্যাপারে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা কন্ট্রোল না করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত এক সপ্তাহে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সহস্রাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৬০১ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টমূলে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০৮৭ জনকে এবং বাকি ৫১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্যান্য মামলায়। গ্রেপ্তার অভিযানে দেশীয় তৈরি দুইটি এলজি, দুইটি চাকু এবং এক রাউন্ড রাবার কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার আগেই সারা দেশে পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযান নামে। গত ১৬ এপ্রিল দিনাজপুর থেকে গাইবান্ধা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ সারওয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর মহাখালী থেকে রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গত ১৭ এপ্রিল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে ডিবি গ্রেপ্তার করে। এর পর দিন ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী যুবলীগের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মো. আরিফ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. শাখাওয়াত, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সহ-সভাপতি বাপ্পি রায়হান, ঢাকা মহানগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের ভাতিজা এবং মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

গতকাল শনিবার রাজধানীতে যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন ফাহিমসহ ছাত্রলীগের ছয় জন নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। অপর গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—৫৯ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সহসভাপতি শেখ মো. সোহেল, বাড্ডা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক মো. সোহেল রানা, বাড্ডা থানার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়ামিন, ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল বাশার খান ও পল্লবী থানা ছাত্রলীগের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম নাইম। এর পাশাপাশি ঢাকার বাইরে সারা দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, পল্লবী, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, লালবাগসহ অর্ধশত স্পটে মিছিল করে।

গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও তাদের সমভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠনের ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছে। বলা হয়েছে, ‘মিছিলকারীদের এদেরকে তাত্ক্ষণিক গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন ও বেআইনি এসব সংগঠনের অপতৎপরতা রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মো. তালেবুর রহমান জানান, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন মিছিল করলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। ছাত্রলীগ যেহেতু নিষিদ্ধ সংগঠন, তাই ছাত্রলীগ মিছিল করলেই গ্রেপ্তার করা হবে।

আওয়ামী লীগ মিছিল করলে গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অ্যাক্ট অনুযায়ী কেউ সমাবেশ করতে চাইলে পূর্বানুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিলে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা দিলে বা যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মিছিল করলে ডিএমপি অ্যাক্টে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

চট্টগ্রামে ১৮ দিনে গ্রেপ্তার ৩০০: চট্টগ্রামে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে গত ১৩ এপ্রিল ৩১ জন, ১২ এপ্রিল ৪৫ জন, ১১ এপ্রিল ২৮ জন, ৮ এপ্রিল ২৯ জন, ৭ এপ্রিল ৩৯ জন, ৬ এপ্রিল ৪৪ জন, ৩ এপ্রিল ৩৯ জন, ২ এপ্রিল ২৯ জন ও ১ এপ্রিল ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কুষ্টিয়ায় গ্রেপ্তার: কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা রহিম উদ্দীন খান ও তার ছেলে রবিন খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার শোমসপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

রাজশাহীতে দুই আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার : শনিবার রাজশাহী মহানগর পুলিশ রাজশাহীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম কমল ও রাজশাহী মহানগর তাঁতী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোকশেদউল আলম সুমনকে গ্রেপ্তার করে।

মৌলভীবাজারে গ্রেপ্তার: শনিবার ভোররাতে উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজার থেকে জুড়ী উপজেলা থেকে যুবলীগ নেতা মাসুক মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে জুড়ী থানা পুলিশ। মাসুক জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামের সামসু মিয়ার ছেলে। ঝিনাইদহে গত ১৫ দিনে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল, যশোর, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও খুলনায় বিভিন্ন সময়ে মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ। এসব ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েক জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram