ঢাকা
২০শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৬:৪০
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫

আমদানি-রফতানির আড়ালে ভয়ঙ্কর জালিয়াতি নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলামের

দেশে কমলার কেজি আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা। আমদানি মূল্য ১০০ থেকে ১২০ টাকা। অথচ ‘মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটস’ এই কমলার আমদানি মূল্য দেখিয়েছে সাড়ে ৭ ডলার বা প্রায় আট’শ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে তখন কমলার দর সর্বোচ্চ দুইশ টাকা। এটির মালিক এবিবি ও নাসা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের জামাতা মোজাম্মেল হোসেন। প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৩২ হাজার কেজি কমলার আমদানি মূল্য দেখায় ২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অস্বাভাবিক দাম দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে সন্দেহ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ)।

নাসা গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের অর্থপাচার ও ঋণ অনিয়ম নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করছে । আজ প্রকাশ করা হয়েছে প্রথম পর্ব।

জানা গেছে, আমদানি-রফতানির আড়ালে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন, নজরুল ইসলাম মজুমদার। ধর্মীয় লেবাস নিয়ে চলাফেরা করলেও জালিয়াতির সম্ভাব্য সব পন্থা তিনি ব্যবহার করেছেন বলে ধারণা বিএফআইইউ’র। কোনো ক্ষেত্রে আমদানি মূল্য দেখিয়েছেন অনেক বেশি; কোনো ক্ষেত্রে অনেক কম। আবার রফতানি দেখালেও টাকা আনেননি দেশে। ব্যক্তিগত প্রভাবে করা এসব অপরাধের শাস্তি হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম মজুমদারের জামাতার প্রতিষ্ঠান মদিনা ডেটসের বিক্রয়কেন্দ্র আছে। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্সে দেয়া ঠিকানায় নেই তাদের প্রধান কার্যালয়। এ বিষয়ে নাসা গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, আমদানির জন্য যখন বেশি মূল্য দেখানো হয়, তখন দুটো উদ্দেশ্য থাকে। সেগুলো হলো— ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া ও অর্থ পাচার করা। নিয়মের বাইরে যে টাকাটা যাবে বা আসবে সেটাই মানি লন্ডারিং।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের রখতিয়ার আহমেদ বলেন, এটিও ফৌজদারী অপরাধ। নিয়মের বাইরে যেটি হয়েছে, সেগুলোর খোঁজ নিয়ে তদন্ত করা দরকার। এরপর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থাও নিতে হবে বলে মত তার।

এদিকে, খেঁজুর আমদানিতে ঘটানো হয়েছে কমলার উল্টো ঘটনা। মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটস দুবাইভিত্তিক কোম্পানি থেকে খেঁজুর আমদানি করে ৩ লাখ ১৩ হাজার ডলারের। প্রতিকেজির দাম দেখিয়েছে, আধা ডলার বা ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অথচ তখন আন্তর্জাতিক বাজারে খেঁজুরের দাম দুইশ টাকার বেশি।

এ বিষয়ে এক আমদানিকারক বলেন, খেজুরের দাম মানের ওপর নির্ভর করে। কোনোটির দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়।

একই ধরনের অনিয়ম করেছে নাসা গ্রুপের ফ্লেমিংগো। তারা সাড়ে ৬ লাখ কেজি খেঁজুরের আমদানি মূল্য দেখিয়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ডলার। প্রতিকেজি দশমিক ৭ ডলার বা ৭৭ থেকে ৯০ টাকা। কম দাম দেখিয়ে বাকি টাকা পাঠানো হয়ে থাকতে পারে হুন্ডিতে। ফ্লেমিংগোর ঋণপত্র ছিল ১৩টি। দাম দেখানো হয় ৩৫ লাখ ডলার।

নজরুল ইসলাম মজুমদারের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ফিরোজা গার্মেন্টস। ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তারা রফতানি আদেশ পায় ১১৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের। এরমধ্যে, ১১৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার দেশে এলেও আসেনি বাকি ১১ লাখ ৫৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এ অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে ধারণা আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, রফতানি হয়েছে কিন্তু সেই অর্থ দেশে আসেনি। এটি তো আরও বড় ধরনের অপরাধ। এগুলো তদন্ত হওয়া দরকার। তিনি কোন কোম্পানির কাছে রফতানি করেছেন, তার সাথে কোম্পানিগুলোর যোগসাজশ আছে কিনা সেসব খোঁজ নিতে হবে।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের রখতিয়ার আহমেদ বলেন, এমন জালিয়াতি একা করা সম্ভব নয়। তার সাথে সহায়ক হিসেবে যারা ছিল তারা নিশ্চয় সহায়তা করেছে। রাজনৈতিক নেতা, যাদের নজরদারি করার কথা কিংবা ব্যাংক সবারই এখানে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।

বিএফআইইউর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফিরোজা গার্মেন্টস যে পণ্য ১৭ ডলারের বেশি দরে রফতানি করছিল, মাত্র চার মাস পর একই পণ্য একই কোম্পানির কাছে রফতানি করেছে মাত্র ৬ ডলার দরে। যেটি সন্দেহজনক।

সর্বশেষ
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram