ঢাকা
৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১১:২০
প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৮, ২০২৫

খরচ বৃদ্ধির চাপে উদ্যোক্তারা

বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে তা টিকিয়ে রাখা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদ বৃদ্ধি, ভ্যাটের বাড়তি চাপ, তারল্য সংকট, টাকার প্রবাহ কমানো, ডলারের উচ্চমূল্য, গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে ঘাটতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। যে কারণে হচ্ছে না নতুন করে শিল্পস্থাপন বা বিনিয়োগ।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা এখন কঠিন সময় পার করছেন। বর্তমানে চালু শিল্প টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের। এর মধ্যে আবার নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ, ভ্যাটের বাড়তি চাপ, খেলাপির নতুন নিয়ম শিল্প খাতে সংকট আরো সংকট তৈরি করেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কাঁচামাল আমদানি করতে পারছেন না। এ জন্য নতুন কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। সরকার যেসব নীতি নিচ্ছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে তারা বিপাকে পড়বেন। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব ও ভ্যাট বৃদ্ধির আগে অর্থনীতি ও জনজীবনে এর কী প্রভাব পড়বে তা খতিয়ে দেখা হয়নি।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা চলছে। আগামী দিনে রাজনীতি কোন দিকে যায়, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা। আবার কারা ক্ষমতায় যেতে পারে, তা-ও তারা বিবেচনায় রাখছেন। অর্থাত্ তারা ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থানে আছেন। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনীতির নীতি-পলিসির সুস্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। সামষ্টিক অর্থনীতি এখনো স্থিতিশীল হয়নি। উচ্চমূল্যস্ফীতি, ব্যাংক খাতের দুর্দশা, গ্যাসের অভাব, জ্বালানি সরবরাহের কোনো নিশ্চয়তা নেই, এগুলো অর্থনীতি ব্যথা, এসব ব্যথা এখনো সারেনি। সবমিলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে আগে ব্যবসায়ীদের আস্থায় আনতে হবে।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের গলা টিপে হত্যা করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে তিনটি কিস্তি পরিশোধ না করতে পারলে খেলাপি করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। আবার আগামী মার্চ থেকে একটি কিস্তি (তিন মাস) পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলেই খেলাপি করা হবে।

তিনি বলেন, নীতি সুদহার বাড়া মানে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়া। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে সেটা আরো বেড়ে গেছে। এখন নতুন বিনিয়োগ দূরের কথা, টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত ব্যবসায়ী সমাজ। যখন ব্যাংকের সুদহার বেড়ে যায় তখন সব হিসাব ওলটপালট হয়ে যায়। কারণ কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং মুনাফার হার কমে আসে।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, দেশে বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে, ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুত্ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সব কিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। উত্পাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। নতুন গ্যাস সংযোগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আবার আইএমএফের সুপারিশে বিভিন্ন পণ্যের ওপর কর-মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় তিন অর্থবছর ধরে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করায় বেসরকারি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে বেসরকারি খাত চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান পাচ্ছে না। পাশাপাশি ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এখন করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ। এতে ঋণের খরচ বেড়েছে। গত আড়াই বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এতে আমদানি খরচ বেড়েছে। ফলে শিল্প খাত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ও ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকিন আহমেদ বলেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেই। দেশের অর্থনীতি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। এর মধ্যে ভ্যাট ও কর বৃদ্ধির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। যদিও কিছু পণ্যের ভ্যাট কমানো হচ্ছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার ব্যাবসায়িক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যা সরাসরি পণ্যের দামে প্রভাব ফেলে। সুদহার সহনীয় পর্যায়ে রাখলে এটি মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি ব্যবসার খরচ কমাতে সাহায্য করবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের সুবিধা পেতে ৩১টি ডকুমেন্ট দিতে হয়। এ কারণে তারা সমস্যায় পড়েন। তাদের জন্য এই প্রক্রিয়া সহজতর করা জরুরি। এদিকে গতকাল চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নামবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, এই অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য সংকটের মুখোমুখি হবে দেশের অর্থনীতি।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যে মন্দা, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং ঋণসেবা ব্যয়ের চাপসহ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা কারণ এই সংকটের জন্য দায়ী। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাকশিল্প। কিন্তু ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি আয় হ্রাস পাচ্ছে। দেশের মূল্যস্ফীতি ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে এবং টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। নীতিনির্ধারকদের উচিত দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, যাতে অর্থনীতির গতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা যায়। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং রাজস্ব বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে স্বল্পমেয়াদে সংকট মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ প্রয়োজন।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশে বিদ্যমান অস্থিরতার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। নতুন ঋণ বিতরণ হয়নি বলেই চলে। কারণ উদ্যোক্তারা চলমান বহুমুখী সংকটের কারণে নতুন ঋণ নিতে চাচ্ছেন না। ফলে দেশে বিনিয়োগও হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ।

সর্বশেষ
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram