ঈশ্বরের অন্যরূপ বলা হয় চিকিৎসকদের! জুলাই আন্দোলনের সময় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া হাসপাতালগুলোয় সে রুপেই অবতীর্ণ হয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
১৮ এবং ১৯ জুলাই! নির্মম সেই দিনগুলোর সাক্ষী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। এ্যাম্বুলেন্স, রিকশা, অটোরিকশা, কিংবা ভ্যানে করে হাসপাতালে আসতে থাকে শত শত হতাহত মানুষেরা। কারো হাত-পায়ে জখম, কারো মাথায়-মুখে রক্তের স্রোত আবার কারো বুক ভেদ করে গুলি বেরিয়ে গেছে পিঠ দিয়ে।
আহতদের চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছিলেন ইন্টার্ন ও ট্রেইনি চিকিৎসকরা। আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে সে সময় রোষানলের শিকার-ও হয়েছেন অনেকে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ(ঢামেক)-এর নিউরোসার্জারী বিভাগের চিকিৎসক ডা. আব্দুল আহাদ বলেছেন, একজন মানুষ হিসেবে এতো পরিমাণ আহত মানুষদের দেখে আমরা সহ্য করতে পারিনি। সেই সময়ে অনেকেরই অবস্থা অনেক খারাপ থাকায় চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ(ঢামেক)-এর ট্রেইনি চিকিৎসক আতাউর রহমান রাজিব জানান, চিকিৎসা দিলে আসলে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি, অভিযোগ করা হয়েছে, যারা চিকিৎসা দিচ্ছে, তারা ‘শিবিরের লোক’।
ঢাকা মেডিকেলের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতদের বড় একটি অংশ আসে রাজধানীর শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তবে এখানে এসেও নানা রকম বাধা ও প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয় তাদের। তবে, ঠিক সেই সময়ে-ও তাদের পাশে এসে দাঁড়ান চিকিৎসকরা।
মূলত, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাবের হতাহতদের আনা হয়েছিল এখানে। ১৮ থেকে ৫ আগষ্ট, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল রামপুরা বাড্ডা, মহাখালী উত্তরা। আওয়ামী ভয়ভীতি আর পুলিশী রেইডে অনেক হাসপাতালের গেইটে তখন তালা। সেই সাথে, বন্ধ ছিল চিকিৎসা সেবা-ও।
পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে স্পট ভিত্তিক চিকিৎসা সেবায় নামেন অনেকে। ভয়ভীতির বিপরীতে উত্তরার ৭ বেসরকারি হাসপাতের ভূমিকা ছিল অনন্য। বিনা চিকিৎসায় আহতরা যখন দিশেহারা, মানবতার দ্বার খুলে দিয়েছিলেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজসহ অনেক হাসপাতালই।
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক মেজর অব. ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো যে আমরা কাসুয়াল ডিপার্টমেন্ট থেকে চিকিৎসা প্রধান করছিলাম। বিশেষকরে, হতাহতদের রক্তপাত বন্ধ করার জন্য। তবে, এক পর্যায়ে হাসপাতালের ভেতরে গুলি চলছিলো। আমার তখন কর্তব্যরত চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করতে হয়েছে যে আমি সামনে রয়েছি, আর তোমরা পেছনে।’
উল্লেখ্য, জুলাই-২৪ এর শিক্ষা নিয়ে আগামীতে চিকিৎসা সেবাকে যেন রাজনীতির উর্ধ্বে রাখা হয় সেই দাবি চিকিৎসকদের।