ঢাকা
৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ২:৫০
প্রকাশিত : মার্চ ২৫, ২০২৫
আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৫
প্রকাশিত : মার্চ ২৫, ২০২৫

ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে পুলিশে চাকরি দেওয়ার নামে ২২লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের কৃষক বাচ্চু মন্ডল এর ছেলে রাব্বি হোসেন ১২০ টাকায় বাংলাদেশ পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকরির আবেদন করেন ২০২৪ সালে। প্রথম তিনটি ইভেন্ট নিজ যোগ্যতাই পার হওয়ার পরেই স্থানীয় সুমন হোসেন নামের এক যুবকের প্রতারণার জালে ফেঁসে যায় সহজ-সরল কৃষক পরিবারের সদস্যরা-এমন অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী। পুলিশে চাকরির জন্য ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যায়ক্রমে সুমনের হাতে তুলে দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে রাব্বির পরিবার। চাকরি না পেলেও টাকা ফেরত পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার।

এ ঘটনায় উপজেলার কোলা ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামে তুলকালাম চলছে রাব্বির পরিবারকে ঘিরে। ছেলেকে পুলিশের চাকরি দিতে গিয়ে সর্বশান্ত রাব্বির বাবা এবং মা। টাকা উদ্ধারের জন্য সুমনের বিরুদ্ধে বদলগাছী থানাতে অভিযোগ করেন রাব্বির মা ববিতা বেগম। থানায় অভিযোগের পরে প্রতারকচক্রের মূলহোতা অভিযুক্ত সুমন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাব্বি পুলিশলাইন্স এ গিয়ে প্রাথমিকভাবে যাচাই বাছাইয়ে টিকে গেলে লিখিত পরীক্ষার আগমুহুর্তে প্রতিবেশী এক ভাবির মাধ্যেমে সুমনের সাথে পরিচয় হয় চাকুরী প্রত্যাশী রাব্বির মা ববিতা বেগমের। সুমন উপজেলার সদর ইউপির হাপোনিয়া গ্রামের বাবু ছেলে। ভুক্তভোগীর সাথে পরিচয়ের পর থেকে বিভিন্ন ভাবে ব্রেনওয়াশ করে চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে প্রথমে ১০ লাখ টাকার চুক্তি করে সুমন। নগদ তিন লাখ টাকা গ্রহণ করেন এই চক্রের হোতা সুমন। তবে লিখিত পরীক্ষার আগের দিন চুক্তির বাকী ৭ লাখ টাকা নগদ গ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়ার নামে রাব্বির মায়ের কাছে আরও সাড়ে ৯ লাখ টাকা দাবী করেন এবং টাকা দিতে রাজী না হলে চাকরি তো হবেই না সেই সাথে সব টাকা মারা যাবে বলে ভয়ভীতিও দেখায়। পরে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীর কাছে থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা জোগাড় করে নগদ টাকা প্রদান করেন সুমনের কাছে।

কিন্তু চাকরি দিতে না পারায় টাকা ফেরত চাইলে সুমন বলেন, টাকা ফেরত নিতে হলে খরচ বাবদ আরও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। বাধ্য হয়ে সেই টাকাও জোগাড় করে সুমনকে টাকা দেয় রাব্বির পরিবার। তারপরেও টাকা ফেরত দেয়নি ঐ সুমন।

টাকা ফেরত না পেয়ে দিশেহারা ঐ ভুক্তভোগী রাব্বি হোসেন এর পরিবার। প্রতারক সুমন ৫ আগষ্টের আগে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর চাকরি দেওয়ার নামে একই এলাকার এক ব্যক্তির কাছে থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়েছে বলেও জানা যায়। সেই ব্যক্তির কাছে থেকে টাকা নেওয়ার সময় একটি ব্যাংক চেক প্রদান করেন তিনি।

এ বিষয়ে জহুরুল ইসলাম নামে সিএনজি ড্রাইভার বলেন, পুলিশের চাকরি দিতে পারবো এমন কথা বলে সুমন আমার সামনে টাকা নিয়েছে এটা সত্য। তবে চাকরি দিতে না পারায় টাকা ফেরত দেয়ার কথা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। টাকা লেনদেনের সময় স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন, সাইদুল ইসলাম, আতোয়ার রহমানসহ সকলের উপস্থিতিতে পুলিশে চাকরি দেয়ার কথা বলে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এসব টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও জানান তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও বলেন, চাকরির দালাল সুমন এখন আর রাব্বির পরিবারের কারো ফোন রিসিভ করেনা। টাকা গুলো কখনো বদলগাছী কফি হাউজ বসে, আবার ভান্ডপুর বাজার এসে, কখনো আবার ববিতার বাড়ী থেকে নিয়ে গেছে, আমরা তাঁর জলজান্ত প্রমাণ বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে ববিতা বেগম ও রাব্বি হোসেন বলেন, সুমন ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে আমাদের সাথে প্রথমে পরিচয় হয়। সে পুলিশে চাকরি দিতে পারবে বলে আমাদের কাছে অঙ্গীকার করে। আমরা পুলিশের চাকরির কথা চিন্তা করে এবং বিশ্বাস করে চাকরি পাওয়ার কথা ভেবে টাকা গুলো দিয়েছি সুমন নামের এক দালালের কাছে। জমি বিক্রি, জমি বন্ধক, জমানো টাকা, কিস্তির টাকা, ধারের টাকা, সুদের উপর টাকা নিয়ে এই সমস্ত টাকা প্রতারকচক্রের মূলহোতা সুমনকে দিয়েছি। এছাড়াও আমাদের কাছ থেকে স্ট্যাম্প নিয়েছে সেটাও ফেরত দেয়নি প্রতারক সুমন। ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত না পেলে স্বপরিবারে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমাদের। প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন এই ছাত্রলীগ পরিচয় দানকারী দালাল সুমনের বিচার চাই। সেই সাথে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আমাদের পরিবারকে রক্ষা করেন।

বিষয়টি নিয়ে মোবাইল ফোনে সংবাদকর্মীর সাথে কথা হলে অভিযুক্ত সুমন হোসেন বলেন, আমি নিজেও তাদের নামে থানায় অভিয়োগ করার কথা ভাবছিলাম কিন্তু অভিযোগ করিনি। পুলিশে চাকরি দেয়ার তেমন কোন বিষয় নেই। আমি তাদের চিনিনা।

কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ঐ এলাকার একজনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছি। সেটার চেক পরে দিয়েছি। আমার কাছে তাদের একটি চুক্তিনামা রয়েছে। মাত্র সেটা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো বলে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেয়।

বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহজাহান আলী বলেন, পুলিশে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার বিষয়ে একটি অভিযোগে পেয়েছি। সুমন নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এক মহিলা। অভিযোগের উপর ভিত্তি করে কাজ করছি আমরা।

প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram