নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে বিএনপি’র করা ২টি মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নড়াইল পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আঞ্জুমান আরা এবং নড়াইল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ’র সদ্য সাবেক সদস্য খোকন সাহাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুপুরের দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের নিরাপত্তার জন্য রীতিমত আদালত চত্বরে সেনা মোতায়েন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) তারা নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জিআর ২১৬ এবং জিআর ২৩২ নং মামলায় হাজিরা দিয়ে জামিন প্রার্থনা করলে জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
মামলার বাদী নড়াইল সদর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোজাহিদুর রহমান পলাশ ও এজহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় নড়াইলে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর হামলা, গুলি ও বোমা বর্ষণ হয়। সেই সাথে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় নড়াইল সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাহিদুর রহমান পলাশ ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলার ২নং আসামি খোকন সাহা এবং ২৬নং আসামি মেয়র আঞ্জুমান আরা। পরবর্তীতে তাদের নামে আরোও একটি নাশকতার মামলা হয়। এসব মামলায় আসামি রয়েছেন নড়াইল পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আঞ্জুমান আরা এবং নড়াইল জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক সদস্য খোকন সাহা। গত ২৭ জানুয়ারি আসামিগণ উচ্চ আদালত হতে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছিলেন। ২০ মার্চ নড়াইলের আদালতে হাজির হবার পরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
এদিকে আসামিদের আদালত থেকে জেলখানায় নেয়ার সময় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা হট্টগোল করলে সেনাবাহিনী আদালত চত্বরে আসে। পরে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পড়িয়ে আদালত হতে জেলখানায় নেয়ার গাড়িতে উঠানো হয়। এরপর সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়। গাড়িতে ওঠার সময় মেয়র আঞ্জুমান আরা ও খোকন সাহা জয় বাংলা শ্লোগান দিলে বিক্ষুব্ধ একজন মেয়র’র গায়ে ডিম ছুড়ে মারে।
এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন বলেন, উচ্চ আদালত হতে যে প্রকৃতি’র জামিন দেয়া হয়েছে, তাতে আসামিদের জামিন বহাল থাকার কথা। কিন্তু আদালত তা করেননি। তিনি দাবি করেন আসামিদের উপর সুবিচার করা হয়নি, তারা ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হয়েছেন।
অপরদিকে বুধবার (১৯ মার্চ) একই আদালত হতে এ মামলার আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাসানুজ্জামান, নড়াইল পৌরসভার ৬নং কুড়িগ্রাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল সিকদার এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুল সিকদারের জামিন পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ মামলার বাদী ও বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এসব আসামিদের জামিন পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মামলার বাদী বিএনপি নেতা মোজাহিদুর রহমান পলাশ, বিএনপি নেতা সোহেল, বিএনপি নেতা কিয়াম, হিরো, পারভেজ সহ আরোও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে পিপি, এপিপি ও বিএনপি পন্থি এ্যাডভোকেটদের বিষোদগার করেন। আদালত চত্বরে একাধিক এপিপি ও এ্যাডভোকেট তাদের তোপের মুখে পড়েন।
তারা প্রকাশ্যে অভিযোগ করে বলেন, যে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলা করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল সহ যেসব নেতারা বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপরা হামলা করতে অস্ত্রের যোগান দিয়েছে, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাদের জামিনে সহায়তা করা হচ্ছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এ্যাডভোকেট আব্দুল হক বলেন, তিনি নিয়মানুযায়ী আসামিদের জামিনে বাঁধা দেয়ার ব্যাপারে যতটুকু যা করার তা করেছেন।