ঢাকা
৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:২৪
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫

রাজধানীতে চাপাতি আতঙ্ক, নেপথ্যে কিশোর গ্যাং

প্রায় এক দশক ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে এখন উঠে এসেছে চাপাতি। পাড়া-মহল্লায় দিনে-দুপুরে চাপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ওরা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে রাজপথ পর্যন্ত চাপাতি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এলাকার আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, এমনকি খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে এই চাপাতি বাহিনীর হাতে। এতে আতঙ্কিত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর-পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা।

পুলিশ সদর দপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সম্প্রতি এই কিশোর গ্যাংয়ে নতুন করে যুক্ত হয়েছে চাপাতি বাহিনী। সারা দেশেই তাণ্ডব চালাচ্ছে তারা। রাত যত গভীর হয়, অলিগলিতে এদের চকচকে চাপাতির প্রদর্শন দেখা যায়। সঙ্গে চলে কিশোর গ্যাংয়ের দোর্দণ্ড প্রতাপ। ভয়ে সাধারণ নাগরিকরা মুখ খুলছে না। দেশে ২৩৭টির মতো কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ১২৭টি। পুলিশের খাতায় এসব গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২ হাজার ৩৮২ জন।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় উল্লেখ করা যাক। মাস দুয়েক আগে বিকালে রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন টিনশেড বাড়ির ওপর এক কিশোরকে চার-পাঁচ জনের কিশোর গ্রুপ চাপাতি দিয়ে প্রকাশ্যে কোপাতে দেখা যায়। মোহাম্মদপুরের আসাদ এভিনিউয়ের ফুটপাতে গভীর রাতে এক পথচারীর কাছ থেকে ছিনতাই করার সময় চাপাতি বাহিনীর চকচকে চাপাতি প্রদর্শনের দৃশ্যও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। গত মাসে যাত্রাবাড়ীতে রিকশায় এক দম্পতির কাছ থেকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় চাপাতি বাহিনী। এ সময় চাপাতির আঘাতে স্বামী গুরুতর আহত হন।

চলতি বছরের শুরুতে গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আদাবরের মেহেদীবাগ, আদাবর বাজার এলাকায় দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এতে বাধা দেওয়ায় এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে গ্যাং গ্রুপের কয়েকশ সদস্য। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় অর্ধশতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা আহত হন।

৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্য চাপাতি দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে আহত হন পুলিশের চার জন সদস্য। হামলার ঘটনার নেপথ্যে রায়েরবাজার বোর্ড ঘাট এলাকার কিশোর গ্যাং ‘পাটালি গ্রুপ’ জড়িত বলে জানায় পুলিশ। নেতৃত্ব দেয় ল্যাংড়া হাসান, ফরহাদ ও চিকু শাকিল। সব মিলিয়ে হামলা চালায় ৩০-৪০ জন।

১ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের গুলিবিনিময়ের মধ্যে এক কলা ব্যবসায়ী ও কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়।

সোমবার রাতে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে রিকশা যাত্রী মেহেবুল হাসান ও নাসরিন আক্তার ইপ্তির ওপর চাপাতি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় মেহেবুলের সামনে নাসরিন দাঁড়িয়ে চাপাতি বাহিনীর হামলা থেকে রক্ষা করে। এই হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে বুধবার রাত ১১টার দিকে মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে এক রিকশাযাত্রী দম্পতিকে চাপাতি বাহিনী তাদের চাপাতি দেখিয়ে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে মোটরসাইকেলে চলে যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ডিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। ঢাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ৪০ শতাংশই কিশোর। আগের চেয়ে তাদের দলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজারের বেশি। তাদের হাতে এখন পিস্তলসহ আধুনিক ধারালো অস্ত্র যেমন চাপাতি, বেকি, বার্মিজ চাকু, কিরিচ রয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, মগবাজার, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের চাপাতি বাহিনীর প্রকাশ্যে দাপট রয়েছে।

মোহাম্মদপুর স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় কিছুদিন পরপর কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা গণছিনতাই চালায়, আবার দেশি অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। সন্ধ্যার পর বাইরে বের হতে ভয় লাগে তাদের। মহড়া দেওয়ার সময় বাসাবাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙচুর, লাইট ভাঙচুর করে গ্যাংয়ের সদস্যরা। আদাবর এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিদের নেতৃত্বে চলছে কিশোর গ্যাংগুলো।

পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকার মধ্যে আদাবর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তত্পরতা সবচেয়ে বেশি। এ দুটি স্থানে একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের কয়েক হাজার সদস্য রয়েছে। আদাবর এলাকার আলিফ হাউজিং, শ্যামলী হাউজিং, শেখেরটেক ও ঢাকা উদ্যান এলাকার সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে এদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া মিরপুর, উত্তরা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লা, ডেমরাসহ রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আগের চেয়ে বেড়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, বেপরোয়া কিশোর গ্যাং সদস্যদের ধরতে ডিবি কাজ করছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েক জন গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা জরুরি। এছাড়া সমাজের বিভিন্ন স্তরে যে ব্যত্যয়গুলো রয়েছে সেগুলো সংশোধন করা প্রয়োজন। আইনের বিষয়গুলোতে আরো কিছু সংযোজন-বিয়োজন প্রয়োজন। পাশাপাশি যারা সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিকদের তাদের এগিয়ে আসা দরকার।

প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram