হুমায়ুন কবীর রিন্টু, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে সৎ মায়ের হাতে চার বছরের শিশু খুন হয়েছে। রাশেদুল নামে শিশুটিকে তার পাষন্ড সৎ মা রহিমা প্রতিহিংসার বসে শ্বাসরোধে খুন করে। এরপর তাকে বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা। নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজন ও এলাকাবাসী এ বর্বরতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাশেদুলের লাশ দাফন করা হয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত সৎ মা-সহ দুইজনকে পুলিশ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আটক করেছে। অরো কেউ জড়িত কি-না? পুলিশ তদন্ত করে দেখছে বলে জানিয়েছে নড়াইল সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, রাশেদুলের মৃতদেহের গলায় নখের আচোড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে, রহিমা তার জা রুমার সহযোগিতায় রাশেদুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আরো কেউ জড়িত আছে কি-না তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিন মির্জপুর গিয়ে দেখা গেছে, পরম আদরের একমাত্র শিশু সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা আব্দুর রহিম। তার বুকফাটা আর্তনাদ আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে মির্জাপুর পশ্চিমপাড়ার পরিবেশ। কোনো সান্ত্বনাতেই থামছেনা তার বুকফাটা আর্তনাদ। অবুঝ শিশুর সাথে এমন পৈশাচিকতায় শোক বিহ্বল শিশুটির অন্যান্য স্বজন ও এলাকাবাসী।
পুলিশ ও স্বজনরা জানায়, স্বামী রহিমের সাথে বনিবনা না হওয়ায় দুধের শিশুসন্তান রাশেদুলকে ফেলে তার মা ফারিয়া আড়াই বছর আগে চলে যায়। এরপর সে অন্যত্র গিয়ে বিয়ে করে এবং ঘর বাঁধেন। রাশেদুল কে ফেলে তার মা ফারিয়া চলে গেলে দুধের শিশু রাশেদুল তার দাদা দাদীর আশ্রয়ে প্রতিপালিত হয়। পরে রহিমাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করে আব্দুর রহিম। কিন্তু রহিমা তার সৎ ছেলে শিশু রাশেদুলকে নিজের করে নিতে পারেনি। রহিমের সংসারে আসার পর থেকেই সে রাশেদুলকে কুনজরে দেখতো হিংসা করতো। এরই এক পর্যায়ে ১৬সেপ্টেম্বর সোমবার বিকালে রাশেদুল নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে এদিন গভীর রাতে বাড়ির পাশের ডোবা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপরই সবার সন্দেহ রাশেদুলের সৎমা রহিমার উপর গিয়ে পড়ে। তাকে জিঞ্জাসাবাদে রাশেদুলকে হত্যার কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও এক পর্যায়ে প্রতিহিংসার বশে তার জা (স্বামীর ভাইয়ের স্ত্রী) রুমার সহযোগিতায় রাশেদুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করে রহিমা। তার স্বীকারোক্তিতে তাকে আটকে রেখে পুলিশে দেয় নিহত রাশেদুলের পরিবার ও এলাকাকার লোকজন। সোমবার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে রাশেদুলের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। স্বজনরা এ নির্মম হত্যাকন্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।
নড়াইলের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবীর জানান, শিশু রাশেদুলের খুনিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য পুলিশ যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে।