মাসুদুর রহমান খান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার বন্যা দুর্গত এলাকায় প্রতিদিন কোথাও এক ইঞ্চি, কোথাও আবার দুই ইঞ্চি পানি কমেছে। এতে করে বন্যাকবলিত এলাকায় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। গত সোমবার পর্যন্ত সরকারি হিসেব অনুযায়ী ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ লোক পানিবন্দি রয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, গত ১৫ দিন ধরে জলবন্দি অবস্থা থাকায় পানিবাহিত রোগবালাই দেখা দিয়েছে দুর্গত এলাকায়। তাছাড়া সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এখন কোমর বা হাঁটু পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। আবার কারও কারও ভেলা বা নৌকাই এখন যাতায়াতের সঙ্গী।
সরেজমিনে সদর উপজেলার বন্যা দুর্গত বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সুপেয় পানি সংকট এবং পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসিরা। এদিকে বন্যায় কৃষি, মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দফতরের তথ্য মতে, কৃষিখাতে ২২৭ কোটি, পানিসম্পদ খাতে ৮ কোটি ৬৫ লাখ এবং মৎস্য খাতে ২৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে পথে বসার উপক্রম হয়েছে কৃষক, মৎস্য চাষি ও পশু-পোল্ট্রি খামারিদের। এমন বাস্তবতায় সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় পানিপ্রবাহে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে কমছে না উজান থেকে নেমে আসা পানি। গত ১৫ দিন থেকে পানিবন্দি হয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘সরকারি হিসেব অনুযায়ী ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ জন লোক পানিবন্দি হয়ে আছেন। জেলার ৪১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৩২ হাজার ৫১৯ জন। জেলার প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা এখনও পানির নীচে। তিনি বলেন, পানি ধীরগতিতে নামছে। দিনে এক থেকে তিন ইঞ্চির মতো পানি কমছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় এলাকা ভেদে প্রায় দুই থেকে আড়াই ফুট পানি কমেছে। তবে জায়গায় জায়গায় বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সদর উপজেলার পানি সেভাবে নামতে পারছে না। পানি যাতে নির্বিঘ্নে নেমে যেতে পারে সেজন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় তারা বাঁধ অপসারণের কাজ শুরু করেছেন।