নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর মাধবদীতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালক হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর চার জনকেই নরসিংদী আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালতে ওই চারজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংদী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য জানান নরসিংদী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন মেহেরপাড়া ইউনিয়নের পাথরপাড়া গ্রামের মজিবর মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়া (২৭), একই এলাকার বকুল মিয়ার ছেলে মো. হৃদয় (২৭), মৃত ইমান আলীর ছেলে নবী হোসেন (৩৫) ও মহিষাশুড়া ইউনিয়নের বালুসাইর গ্রামের মুকসেদ আলীর ছেলে সোহেল মিয়া (৩২)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৫ জুন নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন মদনপুর রোডের ৫নং ব্রিজ থেকে আনুমানিক দুইশো গজ ভিতরে দামের ভাওলা এলাকার একটি কাঁচা রাস্তার পাশে একটি বড়ই গাছের সাথে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে নূরুল ইসলাম (৫০) নামে এক ব্যক্তির ব্যাটারি চালিত রিক্সাটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। ওই সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে নূরুল ইসলাম তার রিক্সা ছিনতাইয়ের ঘটনাটি তার ভাইকে ফোন করে জানায়। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরদিন সকাল ৬টার দিকে ওই স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত নূরুল ইসলাম (৫০) মাধবদী থানাধীন পাঁচদোনা ইউনিয়নের ভাটপাড়া এলাকার মৃত কাশেম আলীর ছেলে।
এরই প্রেক্ষিতে গত ১৯ জুন নিহত নূরুল ইসলামের স্ত্রী শিউলি বেগম বাদী হয়ে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা আসামী করে মাধবদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কেএম শহিদুল ইসলাম সোহাগের তত্ত্বাবধানে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. রিয়াজ উদ্দিন রনিসহ মাধবদী থানা পুলিশ জড়িত আসামিদের তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সনাক্তকরণ ও ছিনতাইকৃত ব্যাটারি চালিত রিক্সা উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। অভিযানের একপর্যায়ে গত ৯ জুলাই মঙ্গলবার মাধবদী থানার একটি টিম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বাচ্চু মিয়া (২৭) নামে একজনকে মাধবদী থেকে গ্রেপ্তার করে। তার দেয়া তথ্য মতে অভিযান চালিয়ে নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে একই দিনে ঘটনার সাথে জড়িত সহযোগী হৃদয়, সোহেল এবং নবী হোসেনকে গ্রেপ্তার করে মাধবদী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত বাচ্চু মিয়া, হৃদয় ও সোহেল এই হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত আর নবী হোসেনকে চোরাই রিক্সা ক্রয় করার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো জানান, তাদের গ্রেপ্তারের পর নবী হোসেনের বাড়ি থেকে ছিনতাইকৃত ব্যাটারি চালিত রিক্সার ২টি ব্যাটারি, একটি চাকা এবং একটি হেডলাইট সংযুক্ত মিটার বক্স উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে বাচ্চু মিয়া ৯ জুলাই এবং সোহেল, হৃদয় ও নবী হোসেন ১০ জুলাই ১৬৪ ধারায় নিজেদের দোষ স্বীকার করে নরসিংদীর বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। তারা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফজল-ই খুদা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শামসুল আরেফিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কেএম শহিদুল ইসলাম সোহাগ, মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও উপপরিদর্শক মো. রিয়াজ উদ্দিন রনি।