গাজীপুর প্রতিনিধি: ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান জানিয়েছেন গাজীপুরে উদ্ধার গ্রেনেডের সঙ্গে ২১ আগস্ট হামলার গ্রেনেডের মিল রয়েছে। তিনি সোমবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবিথী আবাসিক এলাকার একটি পরিত্যক্ত জমিতে পাওয়া গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর এ কথা বলেন।
গত সোমবার সকালে মাটি খননের সময় মাটির নীচ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৬টি আর জে এস গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। পরে বিকালে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিস্ক্রিয় করে। বিস্ফোরণের শব্দে আশেপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়েছিল এবং ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলের আশপাশের স্থানীয় লোকজনকে নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান বলেন, গ্রেনেডগুলো খুবই শক্তিশালী ও বিপদজনক। আমাদের দেশের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় এ জাতীয় আর জে এস গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল।
এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বাসিন্দা আবুল কাশেম বাড়ি নির্মাণ করার জন্য গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবীথি জোরপুকুরপাড় এলাকায় সাড়ে তিন কাঠা জমি ক্রয় করে বাউন্ডারি দিয়ে ফেলে রাখেন। সম্প্রতি তিনি উক্ত জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করেন। সোমবার সকালে স্থানীয় শ্রমিকরা মাটি খনন কাজ শুরু করে। সকাল দশটার দিকে মাটি খনন করার পর গর্তের মধ্যে একটি মাটির কলস বেরিয়ে আসে। এসময় কলসটি কোদালের আঘাত লেগে ভেঙ্গে গেলে কলসের ভিতর গ্রেনেড সদৃশ কয়েকটি বস্তু দেখা যায়। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এগুলো পরিত্যক্ত গ্রেনেড।
জমির মালিক প্রবাসী আবুল কাশেম বলেন, আমি ৩/৪ বছর আগে জমিটি ক্রয় করি। পরে এখানে মাটি ভরাট করে সীমানা প্রাচীর দেই। দুই মাস আগে দেশে ফিরে ৬ তলা বাড়ি করার কাজ শুরু করি। সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে শ্রমিকরা বিষয়টি জানায়। পরে প্রথমেই ৯৯৯ ফোন দেই। পরে নিজে গাজীপুর সদর থানায় গিয়ে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গ্রেনেড উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন র্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাগণ। পরে ঢাকা থেকে দুপুরের দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের বোম ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামানের নেতৃত্বে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১৯ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তারা দুটি অত্যাধুনিক রোবট, বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ ঘটনাস্থলে এসে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এসময় আশেপাশের বিভিন্ন বাসা-বাড়ীর লোকজন ও উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরে কলসের ভিতর থেকে ১৬টি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। পরে বিকেল চারটার দিকে এগুলো নিষ্ক্রিকরণ শুরু করেন। এ সময় হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে নিরাপদ স্থানে গ্রেনেড গুলোর পর পর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের শব্দে আশেপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এ সময় আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। পাশেই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট প্রস্তুত ছিল।
গ্রেনেড নিস্ক্রিয়করণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান। এসময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার ফাহিম আশজাদ ও সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ রাফীউল করিমসহ অন্যরা।
সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান বলেন, সকাল বেলা আমরা একটা ফোন পাই, গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবিথি এলাকায় মাটি খননের সময় বিস্ফোরক জাতীয় কিছু একটা পাওয়া গেছে। এমন খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমরা আমাদের টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসি। তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থলে আমরা এসে দেখতে পেলাম, একটি মটকার (মাটির কলসি) ভিতরে প্রচুর শক্তিশালী গ্রেনেড, যাকে আর জে এস গ্রেনেড বলা হয়। এ কারণে এ জায়গাটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যে কারণে আমরা আমাদের আর ও ভি রোবট (রিমোটলি অপারেটর ভেহিকেল) এই রোবটের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকটি গ্রেনেড আমরা দেখার চেষ্টা করি গ্রেনেডের পিনগুলো অক্ষত আছে কিনা। কারণ পিন খুলে গেলে এটি খুবই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে আমরা সফলতার সাথে সবগুলো গ্রেনেড আলাদা করতে সক্ষম হই। পরে আমাদের টিমের দুইজন সদস্য বোম্ব শ্যুট পড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেনেডগুলো আলাদা আলাদাভাবে ডিসপোজ করতে সক্ষম হই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ১৬টি গ্রেনেড ডিসপোজ করেছি। এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এন্টি পারসোনাল প্রেগমেন্টেশন টাইপ হয়ে থাকে। এটি খুবই শক্তিশালী। এগুলো কোন দেশের, কতদিন আগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কোন দেশের বলা যাচ্ছে না। কারণ গ্রেনেডের গায়ে আমরা কোন ম্যান্যুফ্যাকচারিং মার্ক বা এরকম কোন কিছু পাইনি। এগুলো অনেক আগের, তাই বলতে পারছি না কোন দেশের তৈরি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, আর জে এস গ্রেনেড এটা আমাদের দেশে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা আসলে পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার আছে। তিনি বলেন, গ্রেনেড লাইভ অবস্থায় ছিল। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এগুলো একটি মটকার ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো ছিল। আমরা বলতে চাই এগুলো সেপারেট করা আমাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।